হরিচাঁদ ঠাকুর
হরিচাঁদ ঠাকুর
সুধীর রঞ্জন হালদার
পূর্ববঙ্গের
ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার সফলাডাঙা গ্রামে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ
বুধবার (বাংলা ১২১৮ সালে) মহামানব হরিচাঁদ ঠাকুর নমঃজাতির এক কৃষক পরিবারে
জন্মগ্রহণ করেন।
হরিচাঁদ
ঠাকুরের পিতার নাম যশোমন্ত ঠাকুর ও মাতার নাম অন্নপূর্ণা। হরিচাঁদ ঠাকুরের বাল্যকালের নাম ছিল হরিদাস।
তাঁরা পাঁচ ভাই ছিলেন। তাঁদের নাম ছিল যথাক্রমে- ১) কৃষ্ণদাস, ২) হরিদাস, ৩) বৈষ্ণবদাস, ৪) গৌরীদাস এবং ৫) স্বরূপদাস।
হরিচাঁদ ঠাকুরের জীবনলীলা বিষয়ক শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত নামে একখানি গ্রন্থ লেখেন
কবি তারকচন্দ্র সরকার। সেই গ্রন্থ
থেকে হরিচাঁদ ঠাকুর সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি।
হরিচাঁদ
ঠাকুরের পিতা পরম বৈষ্ণব অর্থাৎ কৃষ্ণভক্ত ছিলেন। কেউ কেউ তাঁকে যশোমন্ত বৈরাগী বলেও ডাকতেন। তাঁদের পদবি বিশ্বাস হলেও
কয়েক পরুষ আগে নিত্য সাধুসেবা, ঠাকুরপূজা, বৈষ্ণবধর্মের আচার পালন করার জন্য তাঁরা সকলের
কাছ থেকে ঠাকুর উপাধি পেয়েছিলেন। তারপর থেকে যশোমন্ত ও
তাঁর পুত্রদের ঠাকুর বলে সবাই জানতেন। সেই জন্য তাঁদের ঠাকুর পদবি হয়।
বাল্যকালে হরিচাঁদ
খুবই দুরন্ত ছিলেন। বাল্যসঙ্গী
ছিল ব্রজ, নাটু, বিশ্বনাথ প্রমুখের সঙ্গে তিনি গোরু চরাতে যেতেন। বৈষ্ণবদের তিনি সহ্য করতে
পারতেন না। বাড়িতে
বৈষ্ণবেরা এলে পিতা যশোমন্ত ঠাকুর তাদের চরণামৃত পান ও পদধূলি নিতে বললে তিনি তা
অমান্য করতেন। অনেক সময়
তাঁদের বাড়িতে বৈষ্ণবেরা এলে তাদের ঝোলা পর্যন্ত লুকিয়ে জলে ফেলে দিতেন।
হরিচাঁদ
ঠাকুরের স্ত্রীর নাম ছিল শান্তিবালা, যাকে আমরা শান্তিমাতা বলি। তাঁর পিত্রালয় ছিল ফরিদপুর জেলার (বর্তমান বাংলাদেশে) জিকাবাড়ি গ্রামে। তাঁর পিতার নাম ছিল লোচন
প্রামাণিক।
হরিচাঁদ
ঠাকুরেরা জমিদার সূর্যমণি মজুমদারের জমিদারিতে বাস করতেন। জমিদার সূর্যমণি মজুমদার মিথ্যা মামলায় ডিক্রি
জারি করে ঠাকুরদের বাড়ি নিজের নামে নিয়ে নিয়েছিলেন। বাধ্য হয়ে তাঁরা সফলাডাঙা ত্যাগ করে সেই জেলারই
রামদিয়ায় সেন বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখান থেকে পরে পার্শ্ববর্তী গ্রাম ওড়াকান্দিতে শ্রীভজরাম চৌধুরীর বাড়িতে
আশ্রয় নেন।
হরিচাঁদ ঠাকুর
প্রথাগত বিদ্যাশিক্ষার কোনো সুযোগ পাননি। তখনকার দিনে নমঃজাতিকে চণ্ডাল বলা হত। চণ্ডালজাতি অস্পৃশ্য বলে তাঁদের বিদ্যাশিক্ষার অধিকার ছিল না। তাই তিনি বিদ্যালয়ে যেতে
পারেননি। যে জন্য তিনি
লেখাপড়া শিখতে পারেননি। লেখাপড়া না
জানলেও তিনি ছিলেন প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন জ্ঞানীব্যক্তি। ছেলেবেলাতেই তাঁর
বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বন্ধুদের কাছে প্রকট হয়ে ওঠে। বন্ধু এবং সাথীরা সকলে তাই তাঁকে ঘিরে থাকতেন। সকলের সব সমস্যার মীমাংসা
করে দিতেন তিনি। প্রথাগত শিক্ষায়
শিক্ষিত না হয়েও প্রখর বুদ্ধিমত্তার জোরে বিজ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর বৌদ্ধিকদর্শন
উপলব্ধি করেছিলেন তিনি। কর্মজীবনে
তাঁর এই জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার দ্বারা শোষিত বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অর্থাৎ পতিত
মানুষদের মুক্তিদূত হিসাবে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন।
তখনকার দিনে
এখনকার মতো চিকিৎসা ব্যবস্থার বিশেষ কোনো সুযোগ ছিল না, এত উন্নতিও ছিল না। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা ছিল খুবই করুণ। গ্রামাঞ্চলে কোনো
ডাক্তারই ছিল না, বিশেষ করে
পতিত জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে। ওঝাদের ঝাড়ফুঁক, কবচ-তাবিজ
ধারণ আর ঈশ্বরের উপর নির্ভরই ছিল তাদের একমাত্র চিকিৎসা। এই অবস্থায় হরিচাঁদ ঠাকুর নিজস্ব বুদ্ধিমত্তার
বলে গ্রাম্য মানুষদের প্রাকৃতিক চিকিৎসার চিকিৎসকের ভূমিকা গ্রহণ করেন। রোগমুক্তির জন্য তিনি
বিভিন্ন রোগে বিভিন্ন রকমের ব্যবস্থা দিতেন; সেইসঙ্গে রোগীর মনোবল বৃদ্ধির জন্য রোগীর বাড়িতে, রোগীকে সঙ্গে নিয়েই হরিবোল নামের কীর্তন করতেন।
এই চিকিৎসা
এবং নামকীর্তনের ফলে রোগীর মানসিক শক্তিবৃদ্ধির কারণে অধিকাংশ রোগেরই উপসম হত। এর ফলে গ্রাম্য মানুষদের
কাছে তিনি উদ্ধারকর্তার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান। তখনকার বৈদিক
ধর্মে প্রভাবান্বিত গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে তিনি তথাকথিত ঈশ্বরের অবতার রূপে
পরিগণিত হন।
হরিচাঁদ ঠাকুর
পিছিয়ে পড়া সমাজের মানুষের জন্য সকল রকম সামাজিক কাজেও অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। কৃষকদের প্রতি নীলকর
সাহেবদের অত্যাচারের প্রতিবাদে কৃষকদের নিয়ে তিনি গোপালগঞ্জ মহকুমার জোনাসুর
নীলকুঠি অভিযানের নেতৃত্ব দেন। সংসার প্রতিপালনের জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত হন। এক সময় তিনি তেলের ব্যবসা
করেন। বিভিন্ন
মুদিদ্রব্য নিয়ে এক সময়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেও বেড়িয়েছেন। ব্যবসাবৃত্তির প্রসার ও
বিজ্ঞান সম্মত উন্নততর পদ্ধতিতে অনাবাদী জমি চাষ করে চাষের উন্নতি ঘটিয়েছিলেন। এই সমস্ত কাজ করে তিনি
সকল পিছিয়ে পড়া মানুষদেরকে সংসার প্রতিপালন ও উন্নততর জীবন গড়ার ক্ষেত্রে সঠিক
পথের দিশা দেখিয়েছেন।
অলীক কল্পনা, অসাম্য ও মিথ্যা ভেদভাব সৃষ্টিকারী বৈদিকধর্ম
তথা হিন্দুধর্মের অমানবিক নীতি-নিয়মের বিরুদ্ধে, যুক্তিবাদকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে ধর্ম এবং অলীক কল্পনায় ভরা ধর্মগ্রন্থের
বিরুদ্ধে- বেদ, পুরাণ, মনুসংহিতা প্রভৃতি গ্রন্থগুলির স্বার্থান্বেষী
বিধানের বিরুদ্ধে ছিল হরিচাঁদ ঠাকুরের আসল সংগ্রাম। ওইসব মিথ্যা শাস্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে
তিনি বললেন, কুকুরের
উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলেও খাই। বেদবিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই।। অবশেষে তিনি বেদবিধি বহির্ভূত একটি নতুন ধর্মের
সূচনা করেন, তার নাম হল
মতুয়াধর্ম।
হরিচাঁদ ঠাকুর
তাঁর সঙ্গীসাথিদের নিয়ে যেভাবে ‘হরিবোল’ ধ্বনিতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতেন, বৈদিকতাকে বর্জন করে যে সমস্ত আচার অনুষ্ঠানে
মত্ত হতেন তাই দেখে তাঁর বিরোধীরা, বিশেষ করে ব্রাহ্মণ-কায়স্থরা ব্যঙ্গ করে তাঁদের মত্ত- মউত্যা- মতুয়া নামে অভিহিত
করত। হরিচাঁদ
ঠাকুরও সেই মতুয়া নামটি মেনে নিয়েছিলেন। তিনি নিজেই বলেছেন- ভিন্ন সম্প্রদায় মোরা মতুয়া আখ্যান। এখন যাঁরা হরিচাঁদ ঠাকুরের অবৈদিক আদর্শ পালন
করে চলেন তিনি বা তাঁরাই মতুয়া।
এই ধর্ম
প্রতিষ্ঠার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে কুসংস্কারাচ্ছন্ন শিক্ষাহীন ধর্মহীন পতিত নমঃজাতিসহ
অন্যান্য অধঃপতিত জাতিদেরকে একটি ধর্মের বন্ধনে আবদ্ধ করা, উন্নততর গার্হস্থ্য জীবনে পূর্ণ শান্তিলাভের
উপায় নির্ধারণ করা এবং সামাজিক অসাম্যের বিলোপ সাধন করে বিশ্ব-সৌভ্রাতৃত্ববোধ
প্রতিষ্ঠা করা।
মতুয়াধর্ম
কর্ম এবং ন্যায়-নৈতিকতার ধর্ম, যে কর্ম
নির্দোষ, বিজ্ঞান সম্মত এবং সাধুজন
দ্বারা প্রশংসিত। যা আসলে
সত্যিকারের মানবতাবাদী ধর্ম হিসাবে পরিচিত। এই ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্য হলো কর্মভিত্তিক সত্য, সাম্য, প্রেম ও
পবিত্রতার নিদর্শন।
হরিচাঁদ ঠাকুর
মতুয়াধর্ম পালনের জন্য কতকগুলি প্রধান নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলি হলো-
১) সদা সত্য
কথা বলা,
২) পরস্ত্রীকে
মাতৃজ্ঞান করা,
৩) পিতামাতাকে
ভক্তি করা,
৪) জগৎকে
প্রেমদান করা অর্থাৎ সকল জীবকে ভালোবাসা,
৫) জাতিভেদ না
করা,
৬) কারও
ধর্মনিন্দা না করা,
৭) বাহ্য অঙ্গ
সাধুসাজ ত্যাগ করা,
৮)
শ্রীহরিমন্দির প্রতিষ্ঠা করা,
৯)
ষড়রিপু থেকে সাবধান থাকা,
১০) হাতে কাম
মুখে নাম করা,
১১) দৈনিক
প্রার্থনা করা ও
১২) ঈশ্বরে
আত্মদান করা।
এ ছাড়াও
বিভিন্ন সময়ে তিনি তাঁর ভক্তদের আরও বহু উপদেশ দিয়েছেন।
মতুয়াধর্মে
পিতামাতাই হলেন প্রধান ঈশ্বর। তাঁরাই সৃষ্টিকর্তা। সন্তানকে লালন
পালন করে তাঁরাই মানুষ করে তোলেন। সন্তানেরও প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হল পিতামাতার সেবা করা, তাঁদের দুঃখকষ্ট, অভাব-অভিযোগের আশু সমাধান করা।
মতুয়াধর্মে
ঈশ্বরের সংজ্ঞা সম্পূর্ণ আলাদা। যে যারে
উদ্ধার করে সে তার ঈশ্বর। উদ্ধার অর্থাৎ অধঃপতিত অবস্থা থেকে উন্নততর
জীবনে উত্তরণ ঘটানো। আর সেই
ঈশ্বরের আদর্শ, পালন করাই
তাঁর কাছে আত্মদান। এখানে
শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুরই পতিত জাতির উদ্ধারকর্তা, তাঁর আদর্শ অনুসরণ করাই তাঁকে আত্মদান।
মতুয়াধর্মে
কাল্পনিক কোনো দেবদেবীর কোনো স্থান নেই কিংবা তাদের পূজা করবারও কোনো বিধান
নেই। কিন্তু দুঃখের
বিষয়, অনেক মতুয়াধর্মী লোকের
ঘরে বিভিন্ন পূজার প্রচলন দেখা যায়। হরিচাঁদ ঠাকুরের
প্রতিকৃতির পাশে নানা দেবদেবীর প্রতিকৃতি রেখে পূজা-অর্চনা করতে দেখা যায়।
এটা কোনোমতেই ঠিক নয়। মতুয়াধর্মে কাল্পনিক দেবদেবীর পূজা নিষিদ্ধ। এ সম্পর্কে হরিচাঁদ ঠাকুরের পুত্র আর এক মহামানব
গুরুচাঁদ ঠাকুর বলেছেন- মতুয়ার পক্ষে কোন পূজা পর্ব নাই। কিন্তু সাধারণ মতুয়ারা ব্রাহ্মণদের প্ররোচনায়
অভ্যাসবশে এসব করে চলেছেন।
মতুয়াধর্মের
প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হচ্ছে সত্য, প্রেম, পবিত্রতা, সাম্য, মৈত্রী ও সততা, সকলের প্রতি ভালোবাসা, কাউকে ছোটো বা নীচ না ভাবা, সকলের জন্য সমান স্বাধীনতা, সমান অধিকার, কাল্পনিক কোনো ঈশ্বরের সন্ধান না করে মানুষ তথা জীবসেবার মাধ্যমেই
আনন্দপ্রাপ্তি অনুভব করা ইত্যাদি।
মতুয়াধর্ম
অনেকটাই ভারতের প্রাচীন সনাতনধর্ম ও বৌদ্ধধর্মকে অনুসরণ করে। তবে তার থেকেও একে আরও সহজ সরল গৃহধর্মী, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানসম্মত করা হয়েছে। প্রাচীন সনাতন ধর্মের
সঙ্গে মতুয়াধর্মের বহুলাংশে সামঞ্জস্য রয়েছে। সাম্য ও ন্যায়-নৈতিকতাকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা আদি
সনাতন ধর্মে কোনো বর্ণভেদ ছিল না, জন্মগত কারণে কেউ উচ্চ-নীচ ছিল না। সমাজে সকল বিষয়ে সকলের ছিল সমানাধিকার। মতুয়াধর্মও এই সকলকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এজন্য এই ধর্মকে সূক্ষ্ম সনাতনধর্ম নামে অভিহিত করা হয়।
হরিচাঁদ ঠাকুর
তাঁর প্রবর্তিত সহজ-সরল ধর্ম মতুয়াধর্ম প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে এই জাতির উন্নতিকল্পে
যে সকলের মধ্যে শিক্ষাপ্রসারের প্রয়োজন এই উপদেশই দিতেন। অবশ্য শিক্ষাদানের জন্য তিনি তাঁর স্বল্পকালীন
জীবদ্দশায় তখনকার পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্যে বিশেষ কিছু করে যেতে পারেননি। কিন্তু তাঁর এই অপূর্ণ
কাজ পূর্ণ করার জন্য পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুরকে নির্দেশ দিয়ে যান।
প্রকৃতপক্ষে
ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতবর্ষে মতুয়াধর্ম প্রবর্তন- বেদ, ব্রাহ্মণ, যাগযজ্ঞ
বিরোধী এক ধর্মান্দোলন বা ধর্মবিপ্লব ছাড়া আর কিছুই নয়। জাতপাত, ধর্মবর্ণ, সম্প্রদায়
ইত্যাদি বিভেদপন্থীদের বিরুদ্ধে হরিচাঁদ ঠাকুর কর্তৃক এ এক যুদ্ধ ঘোষণা। মতুয়ারা প্রত্যেকই সেই
যুদ্ধের এক-একজন সৈনিক, যে যুদ্ধে
নারী ও পুরুষেরা সমান মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত।
মতুয়াধর্মের
ত্রিকোণ লাল বর্ণের পতাকার তিনদিকে সাদা প্রান্তরেখা। লাল অর্থাৎ বিপ্লব বা অগ্রগতির জন্য লাগাতার
সংগ্রাম এবং সাদা অর্থাৎ শান্তির প্রতীক। প্রকৃতপক্ষে সকলের সঙ্গে সম-অধিকারে সহাবস্থানের নীতিতে শান্তির জন্য বিপ্লব। সমাজের অস্পৃশ্যতা, অসাম্য, কুসংস্কার, অমানবিকতা ও
মানবীয় ভেদাভেদ দূর করে সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য বিপ্লব। যুদ্ধজয়ের প্রতীক যেমন মতুয়ার হাতের নিশান, তেমন সেই
যুদ্ধজয়ের ঘোষণা তথা উন্মাদনাকে আরও আরও মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে উদ্বুদ্ধ করতে
ধ্বনিত হয় জয়ডঙ্কা, কাঁসর ও শিঙার
ধ্বনি।
সমস্ত মানুষের
সমানাধিকার প্রতিষ্ঠাই মতুয়াধর্মের মূল উদ্দেশ্য। নারী ও পরুষের মধ্যে সমাজে যে বৈষম্য বিদ্যমান
তাঁর বিরুদ্ধেও হরিচাঁদ তাঁর মত জানিয়েছেন। নারী নরকের দ্বার- এর বিরুদ্ধে
তিনি বলেন- নারীকে অবজ্ঞা করে আদর্শ গার্হস্থ্যধর্ম প্রতিষ্ঠা করা যায় না।
নারী গৃহের কেন্দ্রস্থল। নারীকে বাদ
দিয়ে সংসারের কল্পনা করা যায় না। নারীকে সঙ্গে
নিয়ে ধর্মপথে অগ্রসর হতে হয়। এইজন্যই তিনি নারীশিক্ষা, নারীর মর্যাদা দান ও অধিকার রক্ষার জন্য সবাইকে
নির্দেশ দেন।
হরিচাঁদ ঠাকুর
মাত্র ছেষট্টি বছর জীবিত ছিলেন। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মার্চ (বাংলা ১২৮৪) ভোরবেলা তিনি প্রয়াত হন। তাঁর জন্মদিনের মতো সেই
দিনটিও ছিল বুধবার। প্রয়াণের
পূর্বে তিনি তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার ভার তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র মহামানব গুরুচাঁদ
ঠাকুরের উপর সঁপে দিয়ে যান। গুরুচাঁদ ঠাকুর পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর পিতার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন
করেন।
Comments
Post a Comment